স্বাস্থ্য

“রিও ভাইরাস” এর লক্ষণ সমূহ ,কিভাবে ছড়ায়, প্রতিকার কি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রিও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশেও প্রথমবারের মতো রিও ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। রিও ভাইরাস এর পূর্ণাঙ্গ অর্থ হচ্ছে রেসপিরেটরি এন্টারিক অরফান ভাইরাস। বাংলাদেশেএ পর্যন্ত পাঁচ জনের শরীরে রিও ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৫০ সালে বিশ্বে প্রথম ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। রিও ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যা সাধারণত মানুষ বা প্রাণীর মধ্যে অন্ত্রের সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।এটি সাধারণত পানির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এতে করে শিশুদের ডায়রিয়া ও জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়। এই ভাইরাস একটি শরীরে প্রবেশের তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যেই নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

 রিও ভাইরাসের লক্ষণসমূহ

গবেষক এবং চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে রিও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। রিও ভাইরাসের কারণে সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি যা ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের মত লক্ষণ বহন করে।অনেক চিকিৎসক মনে করছে যে, আমাদের দেশে আগেও এর  প্রাদুর্ভাব ছিল। কিন্তু আমাদের যথাযথ পরীক্ষাগার না থাকার কারণে আমরা এ রোগের পরীক্ষা করতে পারিনি সঙ্গত কারণেই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। এবং এ রোগের টিকাও আমরা  হাতে পাই নাই।

  •  ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা শুরু হয় মানে একদম পানি জাতীয় পাতলা মল।
  •  জ্বর শুরু হয়ে যায় অর্থাৎ শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  •  পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তিদায়ক  অন্ত্রের ব্যথা সৃষ্টি হয়।
  • শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বলতা অনুভব হয়।

“রিও ভাইরাস” কিভাবে ছড়ায়

ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) মনে করছে যে, বাদুড়ের মাধ্যমেই  এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। শীতকালীন সময়ে খেজুরের রস থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। এই সময় রাতের বেলা বাদুড়েরা ওই খেজুরের রস খেয়ে থাকেন। ওখান থেকেই বাদুড়ের নির্যাস খেজুরের রসের মধ্যে চলে যায়। পরবর্তীতে এই খেজুরের রস কোন ব্যক্তি খেলে তার শরীরে “রিও ভাইরাস” ছড়িয়ে পড়তে পারে।সুতরাং বলা যাচ্ছে যে, নিপা ভাইরাসের মতই এই ভাইরাসটি। বিভিন্ন ভাইরালজিস্টরা মনে করছে যে, বাংলাদেশে এটি প্রথম সনাক্ত হলেও এই ভাইরাস অনেক আগে থেকেই ছিল। তাদের ধারণা মতে, এই ভাইরাস কম করে হলে ও ৭৫ বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে রিও ভাইরাস যেভাবে সনাক্ত হলো

ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) বলেছেন,  নিপা ভাইরাসেরউপসর্গ আছে এমন রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে তার রিপোর্ট অনুযায়ী নিপা ভাইরাস  সনাক্ত হয়নি। অর্থাৎ তার রিপোর্ট নিপা ভাইরাস নেগেটিভ এসেছে। পরবর্তীতে ওই রোগীকে রিও ভাইরাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে তার শরীরে রিও ভাইরাসের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বর্তমানে ওই  রোগীটি সুস্থ আছে।

“রিও ভাইরাস” এর প্রতিকার

ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) মনে করছে যে,যারা খেজুরের কাঁচা রস খেয়েছে তাদের শরীর থেকেই রিও ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে।বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যতজনের  শরীর থেকে রিও ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে তারা সবাই খেজুরের রস খেয়ে ছিল।সেহেতু খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।বাংলাদেশে রিও ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত কোন এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করেনি। তবে যেহেতু সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের মত লক্ষণ তার কারণে সাধারণ  জ্বর- সর্দির যেগুলো ঔষধ  ব্যবহার করা হয় সেই ওষুধ গুলোই খেতে হবে। পাশাপাশি যেহেতু এটি ভাইরাসজনিত সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যেন দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে। তবে  চিকিৎসকরা বলছেন যেহেতু এটি নতুন সংক্রমিত হয়েছে এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই সময় অনুযায়ী যুগ উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আসুন সবাই মিলে, আতঙ্কিত না হয়ে এ রোগের প্রতিকার করার জন্য সবাই সচেতন হই। এবং অপরকে এ রোগ সম্পর্কে অবহিত করি। এবং আতঙ্কিত না হয়ে এই ভাইরাস কে মোকাবেলা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *