স্বাস্থ্য

এইচএমপিভি ভাইরাস এর লক্ষণ এবং প্রতিকার কি

গত পাঁচ বছর আগে চীন দেশের উয়ং প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস। এই করোনা ভাইরাসে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। অতি সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই রোগ এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।এবং বেশ কয়েকজন মানুষের শরীরে এইচএমপিভি  ভাইরাস এর নমুনা পাওয়া গেছে। সাধারণত রোগীদের মধ্যে জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ হয়ে শ্বাসকষ্ট এসব রোগ এই ভাইরাসের লক্ষণ বহন করছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে কোনো বয়সী মানুষের নিউমোনিয়ার মত লক্ষণগুলো ধরা পড়ে। একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তিনি কত দিনে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন তা নির্ভর করে কেবলমাত্র তার সংক্রমণের তীব্রতা এবং আক্রান্ত হবার অবস্থা অনুযায়ী।

সাধারণত শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের  ইমিউন সিস্টেম দুর্বল আছে তাদের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমনের পরিমাণ বেশি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। সম্মানিত পাঠক, যারা অনলাইনে এসে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য জানতে চান তাদের সুবিধার্থে আমরা নতুন এইচএমপিভি  ভাইরাস এর বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আপনারা প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করুন এখান থেকে এইচএমপিভি ভাইরাস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।

এইচএমপিভি  ভাইরাস কি

২০০১ সালে এইচএমপিভি  ভাইরাস সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন ( সিডিসি ) এ কথা জানিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন পৃথিবীতে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আরো অনেক যুগ আগে থেকেই ছিল। কোভিড ১৯ এর মতই এটিও একটি আরএনএ ভাইরাস। এ ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। অর্থাৎ কোভিড ১৯ এর গঠন এর মতই এইচএমপিভি  ভাইরাসের গঠন। একই ধরনের জিনের মত।  এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে, কোভিড ১৯ এর টিকা আপনার দেওয়া থাকলেও আপনার এইচএমপি ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। সুতরাংকোভিড ১৯ এর টিকা দিয়েছেন বলেই আপনি নিরাপদ নন। নেদারল্যান্ড দেশের শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের ব্যাপারে জানতে পারেন। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গবেষকরা সাধারণ ফ্ল জাতীয় স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে এটিকে অবহিত করেছেন। একটি সাধারণ ফ্লু হিসেবে তারা গণ্য করেছেন। যা দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই নিজে থেকেই সেরে যায়।

এইচএমপিভি  ভাইরাস এর লক্ষণ সমূহ

যেকোনো রোগের সৃষ্টি হলে তার কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। এই নতুন ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে তার কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। ভাইরাস সংক্রমিত হলে সাধারণ ফুলুর মতো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।

  •  জ্বর, সর্দি, কাশি এর মত লক্ষণগুলো পাওয়া যায়।
  •  অতিরিক্ত সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  •  গায়ের চামড়ায় র্যাস অর্থাৎ ছোট ছোট দানা দানার মত দেখা দিতে পারে।
  •  ভাইরাস সংক্রমণ অতিরিক্ত মাত্রায় হলে কারো কারো শরীরে আরো নানান ধরনের উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।

এইচএমপিভি ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়

এটি এমন একটি ভাইরাস যা বস্তু অথবা স্থান স্পর্শ করলে অর্থাৎ যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সে সকল ব্যক্তিরা যে স্থান স্পর্শ করবে সেই স্থানে যদি অন্য কেউ স্পর্শ করে তাহলে সে আক্রান্ত হতে পারে। অথবা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাচিঁ বা কাশির মাধ্যমে কোন স্থানে হাচি বা কাশির মল কোথাও লেগে থাকে তাহলে সেই ময়লা মল যদি কোন ব্যক্তি স্পর্শ করে তাহলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমন কোন আক্রান্ত ব্যক্তি যদি তোয়ালা দিয়ে নাগ মুখে পরিষ্কার করে তাহলে সেই তোয়ালা যদি অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করে তাহলে তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র যদি আক্রান্ত ব্যক্তি স্পর্শ করে সেখানে যদি তার নাকের সর্দি লেগে থাকে তাহলে ওই জিনিসপত্র যদি আমি বা  কোন ব্যক্তি যদি সেই ব্যবহারকারী জিনিসপত্র স্পর্শ করে তাহলে তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে প্রতিকারের উপায়

এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কোন প্রতিশোধক টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করা হয়নি। তবে খুব দ্রুত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। টিকে আবিষ্কার না হলেও আপনি নিজে সচেতন থাকলে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের এই অংশে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কিছু নির্দেশিকা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

  • বাইরে গেলে মাক্স ব্যবহার করতে হবে।
  •  ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
  •  হাত দিয়ে নাক মুখ স্পর্শ করা যাবে না
  •  আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  •  হাঁচি কাশি যাওয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
  •  ব্যবহৃত টিস্যু সাথে সাথে মুখ বন্ধ করার ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  •  যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাজ করে সেখানে মুখ গুজে দিয়ে হাচিঁ দিতে হবে।
  •  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এরকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  •  সর্দি কাশি জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসা করে পরামর্শ নিতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *