শিক্ষা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রচনা ও স্লোগান- ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণ

ক্ষমতাসীন কোন ব্যক্তি, দল বা সংগঠন যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিংবা দুর্নীতি করে। তখন সেটা কোন দেশের জন্য বা কোন রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হয় না । দেশ বা রাষ্ট্রের সাথে স্বার্থে সেই ক্ষমতাশীল ব্যক্তি বা দল বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতাসুত করার জন্য ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার প্রয়োজন পড়েতখন বিভিন্ন মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতাসুত করা হয় তারই একটি অংশ হচ্ছে আন্দোলন সম্মানিত পাঠক আশা করছি ভালো আছেন আজকে আমরা আপনাদেরকে এই আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা দেবো আপনারা আমাদের প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করছি এই সম্পর্কে আপনাদের সম্মুখ ধারণা হবে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন হলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন ।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। প্রথমত এটি একটি কোটার সংস্কার আন্দোলন হিসেবে ছাত্ররা আন্দোলন করে পরবর্তীতে এটি অসহযোগ আন্দোলনের রূপ নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ তার সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। একটি কমিটি গঠন করে ৬৫ জনকে সদস্য করে হয় যার মধ্যে ২৩ জনকে সমন্বয়ক এবং ৪২ জনকে সহ-সমন্বয়ক হিসেবে ধরা হয় ।এবং পরবর্তীতে তেসরা আগস্ট আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কে নিয়ে ১৫৮ জন সদস্যকে নিয়ে একটি সমন্বয়ক দল গঠন করা হয়। তখন ৪৯ জনকে সমন্বয়কএবং ১০৯ জনকে সহ সমন্বয়ক হিসেবে ধরা হয়। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ নাহিদ ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিফাত রশিদ, প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আলম সার্ভিস আলম, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মোঃ হাসমত আব্দুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসিফ মাহমুদ এবং ভূগোল বিভাগের ছাত্র তাবাকের মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের ছাত্র তালাত মাহমুদ রাফি,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফ সোহেল এবং এবং অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের কে নিয়ে সমন্বয়ক ও সহ সমন্বয়ক হিসেবে সদস্য করা হয়

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রচনা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা শিক্ষার ক্ষেত্রের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৈষম্যের কারণ যেমন বর্ণ, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। ফলে ছাত্র সমাজ অনেক ক্ষেত্রেই এই বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। এই আন্দোলনটি সমাজে শিক্ষা ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল লক্ষ্য শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজে বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ বা আর্থিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বৈষম্যমূলক আচরণ। অনেক সময়ে শিক্ষার সুযোগসুবিধা শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকে, যা সমাজে বৈষম্যের বীজ বপন করে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণ

১. শিক্ষার সুযোগে বৈষম্য: কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকে না, যা শিক্ষার সমতা ব্যাহত করে।সবার ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্য সমান অধিকার অথবা সমান সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে।

২. অর্থনৈতিক বৈষম্য: অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারনে অনেক দরিদ্র ছাত্রছাত্রী ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সামর্থ্য রাখে না, যা তাদের প্রতিভা বিকাশে বাধা দেয়।

৩. জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্য: অনেক সময় জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়, যা শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে সংকুচিত করে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

৪. লিঙ্গ বৈষম্য: কিছু সমাজে কন্যা শিশুদের শিক্ষার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করা হয়, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে লিঙ্গ বৈষম্য থাকা উচিত নয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো সমাজে শিক্ষার ক্ষেত্রে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলন বৈষম্য দূর করে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যেখানে সকল ছাত্রছাত্রী সমানভাবে শিক্ষার সুযোগ পাবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার, মেধার সমতা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু ছাত্র সমাজকে শিক্ষিত করতে সাহায্য করে না, বরং একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার সমান অধিকার অর্জন সম্ভব, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ সমাজ গঠনের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমাজের অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি ন্যায্য ও সঠিক প্রতিবাদ। শিক্ষার অধিকার শুধু কিছু মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ না থেকে, সমগ্র মানব সমাজের জন্য সমানভাবে নিশ্চিত করা উচিত। সকল ছাত্রছাত্রীকে মেধা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, যাতে সমাজে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্লোগান

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্লোগান হতে পারে সমাজে সমান অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্দীপ্ত এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বানমূলক। কিছু উদাহরণ:

  • শিক্ষার অধিকার, সবার সমান ভাগিদার
  • বৈষম্য নয়, সমতার জয়
  • শিক্ষা আমাদের অধিকার, বাধা দিলে প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে
  • জাত-ধর্ম মানি না, শিক্ষার অধিকার ছাড়ি না
  • আমাদের দাবি একটাই, শিক্ষায় বৈষম্য কমাও এখনই
  • শিক্ষা হবে সবার জন্য, বৈষম্য আর মানি না
  • শিক্ষা চাই সমানভাবে, বৈষম্যের ঠাঁই নাই পথে
  • একই সূর্য, একই আলো – শিক্ষা কেন পাবে না সকল ছাত্রছাত্রী ভালো
  • জাত-পাত নয়, মেধাই পরিচয়
  • শিক্ষায় বৈষম্য, সমাজের কলঙ্ক – আসুন আমরা এই কলঙ্ক ঘুচাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *