স্বাস্থ্য

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার 

চিকগুনিয়া রোগ কোন মশার কামড়ে হয়

সম্মানিত পাঠক, বর্তমান সময়ের একটি জটিল রোগের বিষয় আপনাদের সামনে আজকে উপস্থাপন করা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে চিকুনগুনিয়ারোগ রোগ। চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস (Aedes) প্রজাতির মশার মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়া রোগটি সাধারণত প্রাণঘাতী নয়, তবে এর তীব্র ব্যথা এবং উপসর্গগুলি রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট দিতে পারে। সাধারণত, রোগটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায়। তবে রোগ প্রতিরোধের জন্য মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

এই মশাগুলো এমন স্থানে জন্মায় যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। যেমন: ফুলের টব, পানি জমে থাকা পাত্র, পুরনো টায়ার ইত্যাদি স্থানে জন্মায় । মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।আমরা আজকে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে কোন মেয়ের সম্পর্কে আপনাদের সামনে সকল ধরনের তথ্য তুলে ধরবো। আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন ।

চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ

চিকুনগুনিয়ার উপসর্গগুলো সাধারণত মশার কামড়ের ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগের মূল উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর, হাড় ও গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং শরীরজুড়ে ফোলাভাব। কখনও কখনও এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।এর মধ্যে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • তীব্র জ্বর – হঠাৎ তীব্র জ্বর শুরু হয় এবং জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
  • গিঁটে ও পেশিতে তীব্র ব্যথা – বিশেষ করে হাতে, পায়ে, এবং হাড়ের সংযোগস্থলে। ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও চোখে ব্যথা – প্রচন্ড পরিমাণ মাথা ব্যাথা শুরু হয় চোখে অর্থাৎ চোখের  পেছন দিকে ব্যাথা অনুভূত হয়।
  • ত্বকে র‍্যাশ –শরীরের ত্বকে লালচে দানা বা চর্মের উপর র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা – চিকুনগুনি রোগের কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্লান্তি ভাব চলে আসে অর্থাৎ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলতার পরিমাণ এতই বেশি হয়ে যায় যে হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না।

চিকগুনিয়া রোগ কোন মশার কামড়ে হয়

চিকুনগুনিয়া এডিস(Aedes) প্রজাতির মশার কামড়ে হয়। এর মধ্যে প্রধানত এডিস এজিপ্টাই (Aedes aegypti) এবং এডিস এলবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশা ভাইরাসটি বহন করে থাকে।এই মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলায়, বিশেষ করে ভোর এবং সন্ধ্যার দিকে বেশি সক্রিয় থাকে।এজন্য জন্য চিকুনগুনিয়া রোগীদেরকে দিনের বেলায়ও মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর কথা বলা হয়ে থাকে।।

চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ

চিকুনগুনিয়া রোগের মূল কারণ হলো চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV), যা এডিস (Aedes) প্রজাতির মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়ায়। এই মশাগুলো এক একজনের শরীর থেকে অন্যান্য জনের শরীরের উপরে কামড় বসিয়ে থাকে। সে জন্য অতি দ্রুত এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।এডিস মশা যখন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি মশার শরীরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে, যখন সেই মশাটি অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি তার শরীরে প্রবেশ করে এবং রোগের লক্ষণগুলো সৃষ্টি করে।

চিকুনগুনিয়া রোগের প্রতিকার

চিকুনগুনিয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই, তবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে এবং আরামদায়ক থাকার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  • প্রচুর বিশ্রাম –চিকুনগুনিয়ার রোগীদের প্রচুর পরিমাণে বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে সুতরাং শরীরকে আরাম দিতে প্রচুর বিশ্রাম নিন।
  • পর্যাপ্ত পানি পান –  তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে তাতে করে শরীর হাইড্রেটেড  ঠিক থাকবে।যাতে জ্বরের কারণে পানি শূন্যতা এড়ানো যায়।
  • ব্যথা ও জ্বর কমানোর ওষুধ – চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে, তবে অ্যাসপিরিন বা নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
  • ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কম্প্রেস – জ্বর কমাতে শরীরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কম্প্রেস করা যেতে পারে।ভেজা কাপড় দিয়ে বারবার শরীর মুছতে হবে তাতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে।
  • মশার কামড় থেকে সুরক্ষা – মশারি ব্যবহার, মশারোধী ক্রিম ব্যবহার, এবং ঘর ও আশেপাশে মশা জন্মায় এমন স্থান পরিষ্কার রাখা।

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের জন্য মশা নিয়ন্ত্রণ ও মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ওষুধ খেতে হবে। মনে রাখবেন এই রোগ দীর্ঘদিন যাবত থাকলে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি মৃত্যু হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *