বর্তমান সময় বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটা হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। সাধারণত এটি একটি মশা বাহিত রোগ।এডিস মশা ডেঙ্গু এই রোগ ছড়ায়। সারা বিশ্বে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আমাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি এই প্রতিবেদনটি পড়ে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত ধারণা হবে ।
সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে ।এই জ্বর আক্রান্ত ব্যাক্তির মধ্যে পাঁচ থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। শীতকালে এডিস মশা বেশিদিন বাঁচে ।একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায় কিন্তু না ।সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, এডিস মশা তার চরিত্র বদলেছে।এখন দিনে বা রাতে সব বেলাতেই কামড়ায়। বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের ১০ টি লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যার বাহক হচ্ছে এডিস মশা। ডেঙ্গু জ্বরের কিছু সাধারণ লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
১. উচ্চ তাপমাত্রা সহ জ্বর: হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, সাধারণত১০২ – ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
২. মাথাব্যথা: বিশেষ করে চোখের পেছনে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
৩. মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা: মাংসপেশি এবং হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. ত্বকের ফুসকুড়ি: ডেঙ্গুর কারণে চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৫. বমিভাব ও বমি: ক্ষুধামন্দা বোধ হওয়া এবং মাঝে মাঝে বমি হওয়া।কখনো কখনো বমির মাত্রা তীব্র হতে পারে।
৬. শরীরের পানি শূন্যতা: ঘাম বা শরীরের তরল বের হয়ে যেতে থাকে, ফলে শরীরের পানি শূন্যতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।এবং শরীর অত্যন্ত দুর্বল হতে থাকে।
৭. অত্যাধিক ক্লান্তি: শরীরের এত পরিমাণ ক্লান্তি আসে যে মনে হয় শরীর ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।
৮. বমি বা বমিভাব ও ক্ষুধামন্দা: বেশিরভাগ রোগীর ক্ষুধা কমে যায় এবং অনেক সময় বমি হতে পারে।
৯.অস্থিরতা ভাব: ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে অস্থিরতা ভাব লক্ষণ করা যায়।
১০.পাতলা পায়খানা: সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগের একটি নতুন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে পাতলা পায়খানা হওয়া।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি, যা শরীরে শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এখানে কিছু খাবারের পরামর্শ দেওয়া হলো:
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন: ডাবের পানি।
- ফরমালিন মুক্ত ফলমূল খেতে হবে।যাতে করে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয় ।
- খাদ্যা তালিকার নিয়ম অনুযায়ী সবজিশাক-সবজি খেতে হবে ।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বরকে ব্রেক-বোন ফিভার ও বলা হয়।এই জ্বর ৫-৭ দিন থাকে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে শরীরের নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়।কারণ প্রথম বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, সেটার সঙ্গে নতুন ভাইরাসের এন্টিজেনের এক ধরনের রি-এ্যাকশন শরু হয়। সুতরাং এই বিষয়ে অবশ্যই অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে ।
ডেঙ্গুর জ্বরের প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য বিশেষ কোনো প্রতিষেধক ওষুধ নেই, তবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যা উপশম করতে সহায়ক হতে পারে:
১. শরীরকে বিশ্রাম দিন: প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে, যাতে শরীর শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে।এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে ।
২. পানি এবং তরল পান: শরীরের পানি শূন্যতা এড়াতে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
৩. প্যারাসিটামল ব্যবহার: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।
৪. শরীর ঠান্ডা রাখুন: ঘাম বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর জন্য নিয়মিত ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর বারবার সে মুছে নিতে হবে ।যাতে করে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসে ।
৫. মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করুন: এডিস মশা থেকে সুরক্ষার জন্য মশারির ব্যবহার ও স্প্রে ব্যবহার করা উচিত।
৬. পরিষ্কার পানি জমতে দেবেন না: এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে, তাই পানি জমতে না দেওয়া ও আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৭. পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা: ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে, যেন রোগের তীব্রতা জানা যায়।ডেঙ্গু জ্বরের মাধ্যমে শরীরে প্লাটিলেট অনেক কমে যায় সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে।
যদি এই লক্ষণগুলি দেখা দেয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং উল্লেখিত প্রতিকারগুলি অনুসরণ করা উচিত।
আসুন ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে নিয়মিত বাড়ির আঙিনা, বাসার ছাদ কিংবা যেখানে সেখানে পানি জমানো থেকে বিরত থাকি ডেঙ্গু থেকে রেহাই পাই। প্রিয় পাঠক, আশা করছি আমাদের এই প্রতিবেদন থেকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। ধন্যবাদ।