সম্মানিত পাঠক, আশা করছি আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আপনাদেরকে আমাদের সবার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছিলেন বসেছি। বিষয়টি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এই জাতীয় সংগীত এর বিভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। আজকে আমরা জাতীয় সংগীত এর পুরো বিষয়গুলি আলোচনা করব। জাতীয় সংগীত কেন গাওয়া হয় ,জাতীয় সঙ্গীতের লিরিক্স কত লাইন, সম্পূর্ণ বিষয়ে আপনাদেরকে ধারণা দেবো ।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইতিহাস
১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত আমার সোনার বাংলা শীর্ষক সঙ্গীতটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯০৫ সালে রাজনৈতিক বিরোধী স্বদেশী কর্মী ও বিপ্লবী জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যম হিসেবে এই গান প্রচার করা হয়। 1971 সালেমুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গানটির প্রচলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালে ৩ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় গানটি গাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের প্রাক্কালে গানটি গাওয়া হয়েছে।স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা গানটি গীত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার সোনার বাংলা গানটি নিয়মিত পরিবেশিত হতো। স্বাধীনতার পর সাংবিধানিকভাবে অনুচ্ছেদ ৪১ নম্বরে আমার সোনার বাংলা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
পুরো জাতীয় সংগীতটি
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রানে পাগল করে
মরি হায়, হায় রে——
ও মা অঘ্রানে তোর ভরা খেতে আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।
কি শোভা, কি ছায়া গো, কি স্নেহ, কি মায়া গো—
কি আচঁল বিছায়েছো বটের মধ্যে নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—-
মা, তোর বদন খানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি।।
তোমার এই খেলা ঘরে শিশুকাল কাটিল রে,
তোমারি ধুলো মাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কি দ্বীপ জালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—-
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি।।
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পাড়ে যাবার খেয়া ঘাটে,
সারাদিন পাখি- ডাকা ছায়ায়- ঢাকা তোমার পল্লী বাটে, তোমার ধানে- ভরা আঙ্গিনাতে জীবনের কাটে
মরি হায়, হায় রে —
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, তোমার রাখাল, তোমার চাষী।।
ও মা, তোর চরণেতে দিলাম এই মাথা পেতে–
দে গো তোর পায়ে ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিবো চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে —
আমি পরের ঘরে কিনবো না আর, মা তোর ভূষণ ব’লে গলায় ফাঁসি।।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত কত লাইন গাইতে হয়
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন হলে এর ৪১ অনুচ্ছেদে আমার সোনার বাংলা প্রথম ১০ চরণ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।জাতীয় সংগীতের প্রথম দশ ছত্র কণ্ঠ সংগীত এবংপ্রথম ৪ ছত্র যন্ত্র সংগীত হিসেবে পরিবেশন এর বিধান রাখা হয়েছে । সুতরাং আমার সোনার বাংলা গানটির প্রথম ১০ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।এই প্রথম দশ লাইন জাতীয় সংগীত আমাদেরযে কোন অনুষ্ঠানে গাইতে হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত মোট কত লাইন
আমাদের জাতীয় সংগীত এর পুরোটা আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা শুধুমাত্র দশ চরণ সবাই জানি। কিন্তু আমাদের জাতীয় সংগীত সর্বমোট ২৫ চরণ।বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে। জাতীয় সংগীত রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে পরিপ্রেক্ষিতে।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয় সংগীত শুদ্ধভাবে শেখা এবং চর্চার মনোযোগী আমাদের সবাইকে হতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে যথাযথ আইন মেনে জাতীয় সংগীত বাজাতে সর্বোপরি সবাইকে এবং নতুন প্রজন্মতে জাতীয় সংগীত সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হয় তাহলেই আগামী দিনে সোনার বাংলাকে সোনার মতই প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে ।